বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ অপরাহ্ন
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, কালের খবর :
কুড়িগ্রামে বেসরকারি গ্রিন লাইফ হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যুকে ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ নিয়ে খবর সংগ্রহ করতে গেলে হাসপাতালে বাধা দেয় প্রভাবশালীরা। সাংবাদিকদের সঙ্গে চলে বাগ্বিতণ্ডা।
এই ফাঁকে রোগীর স্বজনদের হাসপাতাল থেকে অটোতে জোর করে বের করে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরে স্বজনরা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, অপারেশনের সময় নবজাতককে মেরে ফেলা হয়েছে।
অপরদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, শিশুটি প্রতিবন্ধী ছিল। তার সঠিক গ্রোথ হয়নি।
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্র জানায়, লালমনিরহাট জেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রতিধর চৌধুরীপাড়া গ্রামের বলরাম চন্দ্র রায়ের (৪২) অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী লক্ষ্মীরানীর (২৬) প্রসবব্যথা উঠলে তাকে সোমবার রাত ১১টায় কুড়িগ্রাম শহরের বেসরকারি গ্রিন লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে ওটিতে নেয়া হয়। ৪০ মিনিট পর জানানো হয় সিজার হয়েছে। বাচ্চা প্রতিবন্ধী। পেছনে পা বের হয়েছে। সে বিকলাঙ্গ। তার লাশ কার্টনে রাখা হয়েছে।
রোগীর স্বজনরা বন্ধ প্যাকেট খুলে দেখেন নবজাতকের পেট কাটা ও বাইরে নাড়িভুঁরি বের হয়ে আছে। হাত-পা সব ঠিক আছে। ফলে তাদের মনে সন্দেহ হয়। এ নিয়ে তারা প্রতিবাদ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কথা কানে তোলেনি।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীরানীর দেবর প্রণব চন্দ্র রায় বলেন, বৌদিকে রাত ১১টার দিকে নিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তাকে অপারেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। ৪০ মিনিট পর আমাকে নার্স ওষুধ আনতে বলে। আমি ওষুধ নিয়ে এসে জানতে পারি সিজার কমপ্লিট হয়েছে। বাচ্চা প্রতিবন্ধী। মারা গেছে। পরে রাত ৩টার দিকে আমি কার্টন খুলে দেখি বাচ্চার পেট কাটা ও নাড়িভুঁরি বের হয়ে গেছে। আমি হাত-পাগুলো ঠিকঠাক করে দেখি সেগুলো ঠিক আছে। মঙ্গলবার সকালে আমি বিষয়টি ডাক্তারকে জানালে তারা উল্টাপাল্টা উত্তর দেন। আমরা গরিব মানুষ কী-বা করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, আমি চিৎকার-চেঁচামেচি করার পর আমাকে দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করতে বলা হয়। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আমাকে কথা বলতে দেয়া হয়নি। তারা আমাকে অটোতে তুলে সেই অটোতে হাসপাতালের লোক তিন কিলোমিটার পর্যন্ত সঙ্গে যায়। যাতে কারো সঙ্গে কথা বলতে না পারি। পরে তারা ত্রিমোহনী থেকে ফিরে আসে। আমরা এই হত্যার বিচার চাই।
লক্ষ্মীরানীর স্বামী বলরাম চন্দ্র রায় বলেন, তিন বছর হলো বিয়ে করেছি। এটা আমাদের প্রথম সন্তান ছিল। ঢাকার মাওনা চৌরাস্তায় একটি বাটন ফ্যাক্টরিতে চাকরি করি আমি। ছুটি না পাওয়ায় ছোট ভাইকে দিয়ে স্ত্রীকে পরিচিত ডাক্তারের মাধ্যমে সেখানে ভর্তি করি। আমাকে রাত ১২টায় প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম হয়েছে বলে জানানো হলেও পরে জানতে পারি আমার সন্তান মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আলট্রাসনোগ্রাম করেছি। কিন্তু কেউ বলেনি বাচ্চা বা বাচ্চার মায়ের কোনো সমস্যা রয়েছে।
এ ব্যাপারে ওই হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী ডা. অমিত কুমার রায় নিজে সিজার করার বিষয়টি স্বীকার করে যুগান্তরকে জানান, বাচ্চাটির এবডোমিনাল ওয়াল তৈরি হয়নি। যাকে চিকিৎসার ভাষায় ওম ভেলোসিল বলা হয়। তার পেটের নাড়িভুঁরি সঠিক পরিপক্বতা না আসায় এ সমস্যা তৈরি হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জন ডা. এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি এই মাত্র আপনার কাছ থেকে বিষয়টি জানলাম। এ ব্যাপারে আমাকে কেউ অবগত করেনি বা কোনো ধরনের অভিযোগ নিয়ে আসেনি।